‘সেক্স’=নিষিদ্ধ নয়, বাস্তব

তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। খুব ইচ্ছে হয়েছিল স্টেশনের কাছে যে বইয়ের দোকানগুলি আছে সেখান থেকে এমন একটা বই কেনা যা ‘নিষিদ্ধ। মাঝেমাঝে যখন স্টেশনে আড্ডা মারতে যেতাম তখন একটা নেশা ছিল দুনিয়ার যত রাজ্যের পত্রিকা সংগ্রহ করা। ফলে সেই কিনতে গিয়েই আড়াল আবডাল দিয়ে এমন কিছু বিশেষ প্রচ্ছদ-যুক্ত পত্রিকা চোখে পড়ত যা হৃদয়ের গতিবেগকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেই বয়সের অমোঘ আকর্ষণে ঠিক করলাম একদিন কিনতেই হবে একটি বড়দের পত্রিকা। তবে ভদ্র বাড়ির ছেলে, হুট করে দোকানদারের কাছে গিয়ে কিনব সেটা আকাশ কুসুম ভাবনা। ভাগ্যিস শীতকাল ছিল। পরদিন একটার জায়গায় দুটো সোয়েটার চাপিয়ে নিজেকে একটু মোটা করে, মাফলার দিয়ে নিজের মুখের যতোটুকু ঢাকা যায় ঢেকে গেলাম, সেই নিষিদ্ধ পত্রিকার লোভে। প্রথমে গোটা তিনেক অন্য পত্রিকা কিনে দোকানদারকে চোখের ইশারায় বোঝালাম ঐ বিশেষ পত্রিকাটাও আমার চাই। দোকানদারও ঠোটের কোনায় আলতো হেসে বিশেষ মোড়কে দিয়ে দিল সেটি। ততক্ষণে সেই প্রবল শীতের মধ্যেও আমি দর দর করে ঘামছি। পত্রিকাটি কিনে স্টেশন ছেড়ে যখন বেরিয়ে এলাম তখন এই যুদ্ধজয়ের আনন্দে আমার একেবারে ফুরফুরে মেজাজ। তারপর রাস্তাতেই অপেক্ষাকৃত একটা নির্জন জায়গায় বইটা খুলে এক নিশ্বাসে পুরোটা পড়ার চেষ্টা করলাম। বিশ্বাস করুন এমন কিছু আনন্দই পাইনি সেই নিষিদ্ধ ছবি ও গল্প পরে। সেদিন একটা জিনিস বুঝেছিলাম আমার সমস্ত এক্সাইটমেন্ট জমে ছিল ঐ কিনতে যাওয়ার মধ্যেই। সেটার পর পত্রিকা নিয়ে আমার এক্সাইটমেন্ট এর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।


hooked-porn-xsmall.jpg

সেদিন পত্রিকায় একটি খবর পড়লাম যে শিশুদের মধ্যে নাকি পর্ণ দেখার প্রবণতা বাড়ছে এবং তা থেকে তাঁদের আটকালে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা। অনেকে এর জন্য দায়ী করছেন আধুনিক জীবনযাপন এবং প্রযুক্তিকে। কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবুন তো? আসল সমস্যা কিন্তু অন্য জায়গায়। আসলে আমাদের ছোটবেলা থেকে কিছু জিনিসের উপর বাধানিষেধ আরোপ করা হয় যেটা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে বাবা মা ভাবেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা খারাপ কিছু শিখছেন, কিন্তু বাস্তবে তারা জীবনের সব সত্যি গুলি শেখেই, তবে বিকৃত উপায়ে। ভাবুন তো সেক্স এর থেকে জীবনে সত্যি ও  সুন্দর জিনিস কি কিছু আছে? আজকের স্মার্ট-ফোনের জীবনে একটি ছেলে ক্লাস সেভেন থেকেই সবকিছুই জেনে যায় যা তথাকথিত নিষিদ্ধ। কিন্তু জানাটার সাথে যুক্ত থাকে একটা নিষিদ্ধ অনুভূতি। ফলে এই নিষিদ্ধতার হাত ধরে আসে কিছু বিকৃত চিন্তা ভাবনাও। আরেকটি প্রবণতাও আমি দেখি, ছোটবেলা থেকেই ছেলে এবং মেয়েকে দুটো ভিন্ন গ্রহের মানুষের মতো করে মানুষ করার প্রবণতা। ফলে বড়ো হয়ে একে অপরের প্রতি যে শারীরিক ও মানসিক টান অনুভূত হয় তার মধ্যে কেমন একটা অপরাধবোধ মিশে থাকে। আমি তো মনে করি আজ সমাজে যে নারীকেন্দ্রিক অপরাধগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে তার পেছনে এই কারণটাই দায়ী। এই নিষিদ্ধ টান, যার ফলে নাগালে পেলেই নারী শরীরকে লুটে নেওয়ার একটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। আর মেয়েদের সেক্স ইচ্ছে যেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান। একবার ভাবুন তো আপনার মায়ের সে ইচ্ছেটি না হলে আপনি কোত্থেকে জন্মাতেন? আসলে অপরাধ তা আমাদের সকলের মনেই আছে। আমরা সকলেই ভয় পাই সারা জীবন না পাওয়ার, ফলে এমন কিছু জিনিস যা আমরা পাইনি এতদিন তা যদি একবার পেয়ে যাই তবে তাঁকে যত্নের বদলে লুটে নি।আর সেক্স শব্দটি নিষিদ্ধ নয়।বাস্তব।আমরা নিশ্চয়ই কেউ আকাশ থেকে পরিনি।

তাই ছোটো থেকেই বাচ্চাকে যদি জীবনের সত্যিগুলির সাথে পরিচয় ঘটান তাহলে আপনাকে ফাঁকি দিয়ে তারা আর নিষিদ্ধতার পথ বেছে নেবেনা। স্বাভাবিকতাকে বিসর্জন দিয়ে ন্যাকা সেজে বাচ্চাদের বিপথে ঠেলে দিয়ে কি লাভ বলুন তো?
‘সেক্স’=নিষিদ্ধ নয়, বাস্তব ‘সেক্স’=নিষিদ্ধ নয়, বাস্তব Reviewed by Thailand Life on 10:20 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.