বয়স ৩৯০, অ্যাটম বোমাও মারতে পারেনি এই বনসাই

একে একে পেরিয়ে গিয়েছে ৩৯০টি বসন্ত। তার উপস্থিতিতে ঘটে গিয়েছে দু'টি বিশ্বযুদ্ধ। এমনকি খোদ পরমাণু বোমার তেজষ্ক্রিয়তাও কাবু করতে পারেনি অতিবৃদ্ধ এই বামনাবতারকে। অথচ ২০০১ সাল পর্যন্ত তার অস্তিত্ব সম্পর্কে উদাসীন ছিল দুনিয়া।


২০০১ সালের ৮ মার্চ। উত্তর-পূর্ব ওয়াশিংটনের জাতীয় উদ্যানে হাজির হলেন দুই জাপানি যুবক শিগেরু এবং আকিরা ইয়ামাকি। আব্দার, ঠাকুরদার যত্নে লালিত গাছ দেখবেন। উদ্যান কর্তৃপক্ষের তো মাথায় হাত। সুদূর জাপান থেকে এ কোন আজব খেয়ালের বশে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন ইয়ামাকি ভাইয়েরা! কে তাঁদের ঠাকুরদা? তাঁর হাতে লাগানো গাছ এখানে আনল কে? বাগানে ঢুকে এদিক-সেদিক ঘুরে শেষে এক বনসাইয়ের সামনে এসে তাঁরা দাঁড়ালেন গাছটি এক জাপানি হোয়াইট পাইন। বেঁটেখাটো চেহারা হলেও গুঁড়ির ব্যাস প্রায় ফুট দুয়েক। কিন্তু এর পর বামনাকৃতি এই গাছের সম্পর্কে ইয়ামাকি ভাইয়েরা যে কাহিনি শোনালেন, তা শুনে চোখ কপালে উঠল উদ্যান কর্তাদের।

নথি বলছে, ১৯৭৬ সালে উদ্যানের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে আরও ৫৬টি নমুনার সঙ্গে হোয়াইট পাইনটি উপহার দিয়েছিলেন জাপানের বিখ্যাত বনসাই বিশেষজ্ঞ মাসারু ইয়ামাকি। শিগেরু ও আকিরা তাঁরই নাতি। তাঁরা জানিয়েছেন, ছোট থেকে বাবা-মায়ের মুখে এই গাছ সম্পর্কে নানা কথা তাঁরা শুনেছেন, যদিও চোখের দেখা এই প্রথম। গাছটিকে আজীবন বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন মাসারু- তাঁর বহু গর্বের ধন ছিল সে। ১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট সকাল ৮:১৫ মিনিটে হিরোশিমায় ৯৭০০ পাউন্ড ওজনের পরমাণু বোমা 'লিটল বয়'কে ফেলে আমেরিকা। প্রবল বিস্ফোরণ ও তীব্র বিকিরণে ছারখার হয়ে যায় কয়েক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা ঘন জনবসতি। বাড়ির সমস্ত জানলা ভেঙে চুরমার হলেও বিশেষ আঘাত পাননি বাসিন্দারা। আর আশ্চর্য ভাবে বেঁচে যায় প্রাচীন হোয়াইট পাইন।

উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, বেশ কয়েক বছর আগে নির্ধারিত আয়ু পেরিয়ে গিয়েছে বনসাই পাইনগাছের। আগামী বৃহস্পতিবার হিরোশিমা বিস্ফোরণের ৭০তম বছরের স্মরণে বিশেষ সম্মান জানানো হবে ঐতিহাসিক বনস্পতিকে। বছরভর তার ঠাঁই হতে চলেছে প্রস্তাবিত জাপানি গ্যালারিতে। তার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা ঝরে পড়ে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বছর ছাব্বিশের মোজেস ওয়েইসবার্গের। বিস্ময়ে বিমূঢ় মোজেস জানান, 'অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণ সহ্য করে কেউ সুস্থ ভাবে বেঁচে রয়েছে, ভাবলেই অবাক হতে হয়। এর উপর যখন জানা যায়, ষোড়শ শতকের কোনও প্রতিনিধি আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে, তাতে বাকরোধ হয়ে যায় বই কি!'

আমেরিকার জাতীয় বনসাই ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স লওলিন বিস্মিত সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। তিনি জানান, 'সারা জীবন ধরে যাকে বহু যত্নে পালন করলেন, তাকে প্রকারান্তরে শত্রু দেশের হাতে অবলীলায় তুলে দিয়েছিলেন মাসারু ইয়ামাকি। যখনই এই কথা ভাবি, আবেগে কণ্ঠরোধ হয়ে যায়।'
বয়স ৩৯০, অ্যাটম বোমাও মারতে পারেনি এই বনসাই বয়স ৩৯০, অ্যাটম বোমাও মারতে পারেনি এই বনসাই Reviewed by Thailand Life on 7:11 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.