সন্তান নেশা করছে? আগে থেকেই সতর্ক হোন


হিসেব বলে যতোজন মানুষ নেশা করেন তার মধ্যে অনেকেই প্রবৃত্তির টানে এতে জড়ান না৷ কেউ জড়ান কুসঙ্গে পড়ে তো কেউ জড়ান পরখ করতে গিয়ে৷ তারপর আস্তে আস্তে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে যা যে আর ছেড়ে বেরোতে পারেন না৷ বা অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর পর বেরোতে পারেন৷ কিন্ত্ত ততো দিনে স্বাস্থ্য, ভবিষ্যত, মন, ব্যক্তিত্ব, সবেরই প্রচুর ক্ষতি হয়ে যায়৷ এই ক্ষতি এড়াতে চাইলে বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে৷ নেশা চেপে ধরার আগেই চিনে নিতে হবে তাকে৷ কাজটা যে খুব সোজা এমন নয়৷ কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়ই আচার-ব্যবহারে তেমন কোনও পরিবর্তন আসে না৷ তবে নিরন্তর নজরদারি চালিয়ে গেলে কিছু না কিছু বিচ্যুতি চোখে পড়তে বাধ্য৷ তার সূত্র ধরে মূলে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব৷ আপনার ছেলে বা মেয়ে কি ইদানিং নানা রকম সুগন্ধী মুখশুদ্ধির ভক্ত হয়েছে? যখনই বাড়ি ফেরে মুখে সেই মুখশুদ্ধির গন্ধ পান? একটু খোঁজখবর নিন৷ স্মোকিং-এর গন্ধ চাপা দেওয়ার জন্য কিন্ত্ত সে এ রকম করতে পারে৷ যে যতোই বলুক যে এই বিশেষ ব্ল্যান্ডের মুখশুদ্ধি খেতে তার ভালোলাগে, সে কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই৷ ব্যাগ, পকেট, বিছানা, ড্রয়ার ইত্যাদি সম্ভাব্য সব জায়গা খুঁজে দেখুন দেশলাই বা লাইটার আছে কিনা৷ থাকলে দুইয়ে দুইয়ে চার৷ এবার জানতে হবে সে বিড়ি-সিগারেটের মতো কিছুটা নিরীহ নেশা করছে না বড়ো কিছু৷ বালিশের নীচে, মানিব্যাগে, ড্রয়ারে বা অন্য কোনও জায়গায় স্বচ্ছ পাতলা কাগজ, যাকে রোলিং পেপার বলে, পাওয়া গেলে চিন্তার কথা৷ এর সঙ্গে খরচের বহরও বাড়লে সে কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, সেখানে কী কী হয় সে সব ব্যাপারে খোঁজ লাগানো শুরু করুন৷ 



সজাগ থাকা খুব জরুরি 

নেশা করছে বোঝার পর সতর্ক থাকাটা কিন্ত্ত খুব জরুরি৷ তত্‍পর থাকুন৷ আর সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিন 

সব নেশাতেই যে প্রচুর টাকা লাগে এমন নয়, তবে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মানুষের খরচের হাত বেড়ে যেতে পারে৷ এবং অধিকাংশ শুকনো নেশা এমন যে সামান্য চোখ লাল হওয়া ছাড়া তার আচার-ব্যবহারে, চেহারায় আর কোনও পরিবর্তনই চোখে পড়ে না৷ অনেকে আবার চোখের এই লালভাব ঢাকতে বিশেষ ধরনের আইড্রপ ব্যবহার করে৷ কাজেই তার ঘরে বা ব্যাগে প্রেসক্রিপশন ছাড়া আইড্রপের হদিশ পেলে বুঝতে হবে ব্যাপারটা জটিল হয়ে উঠছে৷ নেশার আর তিন মোক্ষম লক্ষণ হলো, ওজন কমতে থাকা, খিদে বেড়ে যাওয়া ও একা থাকতে চাওয়া৷ টিন এজে সব ছেলে-মেয়েই একটু প্রাইভেসি চায়৷ কিন্ত্ত হঠাত্‍ করে আলাদা শোওয়ার তীব্র ইচ্ছে, কোনও কারণে তার ঘরে ঢুকলে অসম্ভব বিরক্ত হওয়া বা আপনারা তাকে রেখে বাইরে কোথাও যাচ্ছেন শুনলে আনন্দ চেপে রাখতে না পারা, এই সব লক্ষণ দেখা দিলে তা হালকাভাবে নেবেন না৷ ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে কী করবেন না করবেন সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ ইমোশনাল হয়ে তাকে বকাবকি বা মারপিট করলে কেস খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ মনে রাখবেন, এই বয়সে অনেকেই এ রকম করে৷ সেটা খুব বড়ো একটা ভুল, কিন্ত্ত খুন-জখম-রাহাজানির মতো অপরাধ নয়৷ আপনারা সঠিকভাবে পাশে থাকলে সে সহজেই এর হাত থেকে বেরোতে পারবে৷ 


মনে রাখুন 

সন্তানের আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন এলে প্রশ্নে প্রশ্নে তাকে জর্জরিত না করে নিজে আলাদাভাবে একটু খোঁজখবর করার চেষ্টা করুন৷ 

টাকা-পয়সা সামলে রাখুন৷ হাতখরচ দিন বুঝেশুনে৷ 

খিদে খুব বেড়ে বা কমে গেলে, ওজন কমতে শুরু করলে কী কারণে এমন হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন৷ প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান৷ 

সব ব্যাপারে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে, নিজের মতামত তার উপর চাপিয়ে না দিয়ে সে কী চায় তা বোঝায় চেষ্টা করুন৷ 

নেশা করার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলে মাথা ঠাণ্ডা করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷ শারীরিক অসুখের মতো এই অসুখেও সঠিক চিকিত্‍সায় একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে৷
সন্তান নেশা করছে? আগে থেকেই সতর্ক হোন সন্তান নেশা করছে? আগে থেকেই সতর্ক হোন Reviewed by Thailand Life on 11:11 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.